পেহেলগাঁও হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ও চীনের ভূমিকা ।
কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে নারকীয় জঙ্গি হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক চরম উত্তেজনার পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে চীনের প্রকাশ্যভাবে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেওয়া আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
![]() |
pakistan-china-handshake Ghibli style animation |
পেহেলগাঁও হামলার বিস্তারিত
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল, কাশ্মীরের বৈসারন উপত্যকায় সংঘটিত হয় একটি নির্মম জঙ্গি হামলা। সন্ত্রাসীরা বাস থামিয়ে ধর্ম জিজ্ঞেস করে বেছে বেছে পর্যটকদের হত্যা করে। এতে অন্তত ২৬ জন নিহত ও ১০ জন গুরুতর আহত হন। হামলাকারীরা নারী ও শিশুদের ছেড়ে দিয়ে মূলত পুরুষ হিন্দুদের নিশানা করে।
পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ‘দ্য রেজিস্টেন্ট ফ্রন্ট’ এই হামলার দায় স্বীকার করে। ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা একে পুলওয়ামার পর সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা বলছেন।
---ভারতের প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ
হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একে “নরকীয় বর্বরতা” বলে উল্লেখ করেন এবং জানান এই হামলার জবাব অবশ্যই দেওয়া হবে। ভারত সরকার একাধিক কঠোর কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যার মধ্যে রয়েছে:
- সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত
- আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ
- পাকিস্তান হাইকমিশনের সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার
- দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক কর্মী সংখ্যা কমিয়ে আনা
- সব ধরনের পাকিস্তানি ভিসা জারি স্থগিত
ভারতের এই অবস্থান পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে চাপে ফেলতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হলেও, পরিস্থিতি তখনই নতুন মোড় নেয় যখন চীন প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে সমর্থন করে।
---চীনের পাকিস্তানপ্রীতি: আঞ্চলিক নিরাপত্তায় নতুন চাপ
হামলার পরপরই চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই পাকিস্তানের সঙ্গে ফোনালাপে জানান, চীন পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে। চীন পাকিস্তানের নিরাপত্তা উদ্বেগকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেয় এবং সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপে তাদের পাশে থাকার বার্তা দেয়।
চীনের এমন অবস্থান ভারতকে কৌশলগতভাবে উদ্বিগ্ন করে তোলে। কারণ, সীমান্তে উত্তেজনার সময় পাকিস্তানের পাশে চীনের থাকা ভবিষ্যৎ সংঘর্ষ বা প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
---চীনের অবস্থান কী বোঝায়?
- চীন পাকিস্তানের প্রতি ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ।
- ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে ভারসাম্য রক্ষা করতে চায়।
- কাশ্মীর ও সন্ত্রাসবাদের ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ফোরামে ভারতকে চাপ দিতে চায়।
এই প্রেক্ষাপটে চীনের অবস্থান ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার নতুন মাত্রা সৃষ্টি করছে।
সুত্রঃ প্রতিদিন, যুগান্তর, আমাদের সময়.কম
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: কোন পথে এগোচ্ছে?
ভারতের প্রতিশোধমূলক কূটনীতির পাশাপাশি পাকিস্তানও কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলছে। এখন এই উত্তেজনার মধ্যে আন্তর্জাতিক মহলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ দৃশ্যপট:
- কূটনৈতিক সমাধান: যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ উভয় দেশকে আলোচনায় ফিরিয়ে আনতে পারে।
- সীমিত সামরিক সংঘর্ষ: সার্জিকাল স্ট্রাইকের মতো পদক্ষেপ ভারতের পক্ষে সম্ভব, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
- চীন ও পাকিস্তান জোটবদ্ধ প্রতিক্রিয়া: ভারতীয় পদক্ষেপের বিপরীতে চীন ও পাকিস্তান যৌথ অবস্থান নিতে পারে।
উপসংহার
পেহেলগাঁও হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা অনস্বীকার্যভাবে বেড়েছে। ভারতের কড়া প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক অবস্থানের জবাবে চীনের প্রকাশ্য সমর্থন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এখন একটি সামান্য ভুল সিদ্ধান্ত বড় ধরনের সংঘর্ষ ডেকে আনতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মহলের দায়িত্বশীল ভূমিকা, সংযম ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ছাড়া এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান অসম্ভব হয়ে উঠবে।
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ