SSC রায় মানতে নারাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: বরখাস্ত শিক্ষক-কর্মীদের পাশে থাকার বার্তা
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা দপ্তরের নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির জেরে সম্প্রতি উচ্চ আদালতের একাধিক রায়ে বহু শিক্ষক ও কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু এই রায়কে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এই রায় মানেন না এবং বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক-কর্মীদের পাশে আছেন।
কি বললেন মুখ্যমন্ত্রী?
এক সরকারি অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কাজ করে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের কেবল কোনও প্রক্রিয়াগত ত্রুটির জন্য বরখাস্ত করা অন্যায়। বিচারব্যবস্থার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে, কিন্তু আমি এই রায় মানি না।” তিনি আরও জানান, “আমি তাঁদের পাশে আছি। সরকার তাঁদের সাহায্য করবে।”
বিচারব্যবস্থার রায় কী বলছে?
কলকাতা হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায়ে বলা হয়েছে, এসএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। একাধিক 'অযোগ্য' প্রার্থী নিয়োগ পেয়েছেন এবং অনেকের OMR শিটে ঘষামাজা বা পরিবর্তনের প্রমাণ রয়েছে। সেই কারণে শ'খানেক শিক্ষক ও কর্মীকে ইতিমধ্যে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
![]() |
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য: "আমি বেঁচে থাকতে চাকরি যাবে না । |
এসএসসি দুর্নীতি মামলা: পটভূমি
২০১৪ এবং ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা ঘিরে প্রথমে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সিবিআই ও ইডি তদন্তে উঠে আসে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার মতো ভয়ঙ্কর অভিযোগ। তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই মামলায় গ্রেফতার হন এবং বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধার হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থানের রাজনৈতিক বার্তা
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অবস্থান মূলত রাজনীতিকভাবে প্রভাবিত। যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন তাঁদের পরিবারের ভোটব্যাংক এবং জনসমর্থন ধরে রাখার লক্ষ্যে তিনি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন যে সরকার তাঁদের একা ছাড়বে না।
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
বিরোধী দলগুলি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “বিচারব্যবস্থাকে অবজ্ঞা করে সরকার যদি দুর্নীতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে সেটা গণতন্ত্রের অপমান।” বাম ও কংগ্রেস নেতারাও মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে অনভিপ্রেত বলে আখ্যা দেন।
বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক-কর্মীদের প্রতিক্রিয়া
যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য তাঁদের কিছুটা ভরসা জোগাচ্ছে। একজন বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক বলেন, “আমরা কাজ করছিলাম নিয়মমাফিক, আমাদের যদি শুধু প্রশাসনিক ভুলের জন্য শাস্তি হয়, তবে সেটাও অন্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর পাশে থাকা আমাদের সাহস জোগাচ্ছে।”
বর্তমানে কী পরিস্থিতি?
সরকার আপিল করতে পারে এমন ইঙ্গিত দিয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা দপ্তর বিকল্প আইনগত উপায় খতিয়ে দেখছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, "আমরা আইন মেনেই ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করব।"
FAQ (প্রশ্নোত্তর)
১. এসএসসি দুর্নীতির মামলায় কতজন শিক্ষক-কর্মী বরখাস্ত হয়েছেন?
বর্তমানে ৮০০-এর বেশি শিক্ষক ও কর্মী বরখাস্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
২. মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলেছেন এই রায়ের বিষয়ে?
তিনি জানিয়েছেন, তিনি এই রায় মানেন না এবং বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক-কর্মীদের পাশে আছেন।
৩. বিরোধীরা কী বলছে এই ইস্যুতে?
বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের বিরোধিতা করে বলেছে, সরকার দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করছে এবং বিচারব্যবস্থাকে অবমাননা করছে।
৪. কি হতে পারে পরবর্তী পদক্ষেপ?
রাজ্য সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যেতে পারে। পাশাপাশি প্রশাসনিক স্তরেও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
উপসংহার
SSC দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যের রাজনীতি তুঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার কী পদক্ষেপ নেয় এবং আদালতের ভবিষ্যৎ রায় কী হয়। তবে বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক ও কর্মীদের দৃষ্টিকোণ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা কিছুটা আশার আলো জাগিয়েছে।
সূত্র: কলকাতা হাই কোর্ট, আনন্দবাজার পত্রিকা, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ABP Ananda
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ