ট্রাম্পের ঘোষণা: ভারত ও চীনের ওপর পাল্টা শুল্ক, বিশ্ববাণিজ্যে নতুন উত্তেজনা
বিশ্ববাণিজ্যে নতুন উত্তেজনা, ভারতের ওপর মার্কিন শুল্কের প্রভাব কেমন হবে?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, ভারত ও চীনের পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করা হবে, যা ২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। এই পদক্ষেপের ফলে বিশ্ববাণিজ্যে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে।
ট্রাম্পের ঘোষণা: ভারত ও চীনের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক আসছে ২ এপ্রিল থেকে
ওয়াশিংটন, ৫ মার্চ: যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও আসন্ন নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত ও চীনের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক (reciprocal tariffs) আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ২ এপ্রিল থেকে ভারত ও চীনের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর কর নীতি গ্রহণ করবে। ট্রাম্প বলেছেন, "আমরা তাদের শুল্ক আরোপ করব, যেমনটা তারা আমাদের পণ্যের ওপর করে।"
এই ঘোষণার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন এক উত্তেজনার সূচনা হতে পারে। বিশেষ করে ভারত ও চীনের মতো দুই বড় অর্থনীতির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কতটা পরিবর্তিত হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।
কেন এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত?
ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই "America First" নীতির পক্ষে কথা বলে আসছেন। তার মতে, ভারত ও চীন আমেরিকান পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, "আমাদের দেশ দীর্ঘদিন ধরে অন্য দেশগুলোর কাছ থেকে অন্যায্য বাণিজ্য আচরণের শিকার হয়েছে। ভারত ও চীন আমেরিকান পণ্যের ওপর শুল্ক বসাচ্ছে, কিন্তু আমরা তাদের পণ্য প্রায় শুল্ক-মুক্তভাবে গ্রহণ করি। এটি আর চলতে দেওয়া যাবে না।"
![]() |
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উত্তেজনা: ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক বিরোধের প্রতীকী চিত্র। (ফাইল চিত্র) |
ভারত ও চীনের প্রতিক্রিয়া
এখন পর্যন্ত ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের অর্থনীতির ওপর এটি বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, "আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং প্রয়োজনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
চীন অবশ্য এই বিষয়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বেইজিং থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, "আমরা যুক্তরাষ্ট্রের এমন একতরফা সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি। যদি যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করে, তবে আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।"
ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য সম্পর্কে প্রভাব
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৩ সালে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ১৯১ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। আমেরিকা ভারতের অন্যতম প্রধান রপ্তানি গন্তব্য, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ, টেক্সটাইল ও কৃষিপণ্য খাতে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে নিম্নলিখিত খাতগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে:
- তথ্যপ্রযুক্তি (IT): ভারতীয় IT কোম্পানিগুলো আমেরিকান ক্লায়েন্টদের জন্য কাজ করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। নতুন শুল্ক নীতি তাদের আয় কমিয়ে দিতে পারে।
- ফার্মাসিউটিক্যালস: যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের ওষুধ রপ্তানি গুরুত্বপূর্ণ। নতুন কর নীতি ভারতীয় ওষুধ শিল্পের প্রতিযোগিতা কমিয়ে দিতে পারে।
- পোশাক ও টেক্সটাইল: ভারতীয় পোশাক শিল্পের বিশাল বাজার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি পেলে এই খাতের রপ্তানি কমতে পারে।
- গাড়ি ও যন্ত্রপাতি: ভারতে তৈরি কিছু গাড়ি ও ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য আমেরিকায় রপ্তানি হয়, যেগুলোর ওপর নতুন শুল্ক বসলে দাম বেড়ে যাবে।
চীনের ওপর প্রভাব কেমন হতে পারে?
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আগে থেকেই বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে। ট্রাম্পের সময়ে আমেরিকা চীনা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপ করেছিল, যা বাইডেন প্রশাসন পুরোপুরি প্রত্যাহার করেনি। নতুন করে পাল্টা শুল্কের ফলে চীন-আমেরিকা বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জটিল হতে পারে।
চীনের রপ্তানির একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে যায়, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স, স্মার্টফোন, গৃহস্থালী পণ্য ও স্টিল শিল্পে। ট্রাম্পের নতুন নীতির কারণে চীনের এই খাতগুলোর ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত নির্বাচনের কৌশল কিনা?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প এই ঘোষণার মাধ্যমে আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। তিনি মার্কিন নাগরিকদের বোঝাতে চান যে, তার প্রশাসন "America First" নীতি অনুসরণ করবে এবং আমেরিকান শিল্প ও কর্মসংস্থান রক্ষা করবে।
বিশ্লেষক জন স্মিথ বলেন, "ট্রাম্প তার সমর্থকদের দেখাতে চাইছেন যে, তিনি আমেরিকানদের স্বার্থে কাজ করবেন। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও শিল্প খাতের শ্রমিকদের আকৃষ্ট করাই তার লক্ষ্য।"
বিশ্ববাজারে প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পরপরই বিশ্ববাজারে কিছুটা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে কিছু প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির শেয়ারমূল্য কমতে শুরু করেছে। এশিয়ান বাজারেও কিছুটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, বিশেষ করে ভারতের সেনসেক্স ও নিফটি সূচকে সামান্য পতন হয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, যদি ট্রাম্পের নীতি কার্যকর হয়, তাহলে এটি বিশ্ববাণিজ্যে এক নতুন প্রতিযোগিতার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
ভারত ও চীনের সম্ভাব্য পদক্ষেপ
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত ও চীন উভয় দেশই পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়াতে পারে, যেমন আমেরিকান গাড়ি, ইলেকট্রনিক্স ও কৃষিপণ্য। চীনও একইভাবে পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে পারে, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা বাড়াবে।
আরও খবর পড়ুনঃ BRICS: বৈশ্বিক শক্তির নতুন সমীকরণ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
উপসংহার
ট্রাম্পের ঘোষণা বিশ্ব বাণিজ্যে নতুন করে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। ভারত ও চীন কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, তা ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নির্ধারণ করবে। তবে ট্রাম্প যদি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি বড় ধরনের পরিবর্তনের দিকে যেতে পারে। ভারত ও চীনের সরকার এখন কৌশলগত পরিকল্পনা করছে, যাতে তারা নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করতে পারে।
আপনি যদি এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে চান, আমাদের সঙ্গে থাকুন। নতুন আপডেট পেতে আমাদের নিউজ পোর্টাল নিয়মিত ভিজিট করুন।
Breaking News Todays
আপনার বিশ্বসংবাদ, এক ক্লিকে
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ