ব্রিটেন সফরে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর: পাক অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলেই মিটবে নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ সংঘাত!
লন্ডন, ৬ মার্চ: ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ব্রিটেন সফরে গিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (PoK) ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলেই দিল্লি ও ইসলামাবাদের দীর্ঘদিনের সংঘাত নিমেষেই মিটে যাবে। তার এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে আলোড়ন ফেলেছে।
জয়শঙ্করের বক্তব্য
লন্ডনে এক কূটনৈতিক আলোচনায় জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে। এটাকে ভারত নিজের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করলেই নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন চিরতরে মিটে যাবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘ভারত সর্বদা শান্তি চায়। তবে এই শান্তি নিশ্চিত করতে হলে বাস্তবতাকে স্বীকার করতে হবে। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর অবৈধভাবে দখল করে রাখা হয়েছে। এটি ভারতেরই অংশ এবং একে পুনরুদ্ধার করা হবে।’’ সুত্রঃ আনন্দ বাজার
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
জয়শঙ্করের এই মন্তব্যের পরই পাকিস্তান কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ইসলামাবাদের বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘‘ভারতের এই দাবিকে আমরা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করছি। পাক অধিকৃত কাশ্মীর পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।’’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার-উল-হক কাকর বলেছেন, ‘‘কাশ্মীর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি বিতর্কিত অঞ্চল। ভারত এখানে একতরফা কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারবে না।’’ এটাও জেনে রাখা ভাল ভুল করেও যেনো পাকিস্তানে ওপর কোন কিছু করে না বসে ভারত ৷ ভারতের ঐতিহাসিক ভুল হবে সব নজর রাখছে ইসলামাবাদ ৷ সুত্রঃ সংবাদ মাধ্যম ৷৷
![]() |
এস জয়শঙ্করের বক্তব্যের পর পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। |
ভারতের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
ভারতে জয়শঙ্করের এই মন্তব্যকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। বিশেষত বিজেপি নেতারা বলছেন, এটি সরকারের সুদৃঢ় অবস্থানের প্রতিফলন। বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা বলেন, ‘‘এটি কেবল জয়শঙ্করের বক্তব্য নয়, এটি ভারতের নীতি। পাক অধিকৃত কাশ্মীর ছিল এবং থাকবে ভারতেরই অংশ।’’
তবে বিরোধীরা এই ইস্যুতে কিছুটা সংযত প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেন, ‘‘কূটনীতির মাধ্যমে সমাধান করা উচিত, আবেগপ্রবণ মন্তব্য করে নয়।’’
কাশ্মীর প্রসঙ্গ ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর থেকে কাশ্মীর ইস্যু দুই দেশের মধ্যে অন্যতম প্রধান সংঘাতের কারণ। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধসহ একাধিক যুদ্ধ হয়েছে, যার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল কাশ্মীর।
পাক অধিকৃত কাশ্মীরের (PoK) অঞ্চলটি ১৯৪৭ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় থেকে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ভারত দাবি করে, এটি তার ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা বেআইনিভাবে দখল করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জয়শঙ্করের বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মহলেও প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, তারা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে।
আরও খবর পড়ুনঃ পাকিস্তান চিনের কাছে পঞ্চম প্রজন্মে যুদ্ধবিমান কিনতে চলেছে।'ঘুরপথে' ভারতকে কি সতর্ক করছে বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, ‘‘কাশ্মীর ইস্যু ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয়। উভয় দেশ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করুক, সেটাই আমরা চাই।’’
ভারতীয় সেনার প্রস্তুতি ও PoK পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা
ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পাণ্ডে আগেই বলেছিলেন, ‘‘যদি সরকার নির্দেশ দেয়, তাহলে সেনা যে কোনো মুহূর্তে PoK পুনরুদ্ধারে সক্ষম।’’ সেনাবাহিনীর এই মন্তব্যও ইঙ্গিত দেয় যে, ভারত সরকার ভবিষ্যতে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।
পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ চাপ
পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সেনাবাহিনীর আধিপত্যের কারণে দেশটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের এই কৌশল পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
উপসংহার
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন মোড় আনতে পারে। PoK নিয়ে ভারতের দৃঢ় অবস্থান ও পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্ককে আরও উত্তপ্ত করতে পারে। এখন দেখার বিষয়, আন্তর্জাতিক মহল এই উত্তেজনাকে কীভাবে সামাল দেয় এবং দুই দেশ পরবর্তী সময়ে কী পদক্ষেপ নেয়।
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ