পাকিস্তানে ট্রেন হাইজ্যাকের নাটকীয় সমাপ্তি ১১ জন নিহত, সেনাবাহিনীর অভিযানে মুক্ত যাত্রীরা ৷
ইসলামাবাদ, পাকিস্তান – পাকিস্তানে ট্রেন হাইজ্যাকের একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর অবশেষে সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে যাত্রীদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। দেশটির বেলুচিস্তান প্রদেশে জাফর এক্সপ্রেস হাইজ্যাক করার পর সন্ত্রাসীরা যাত্রীদের জিম্মি করে রেখেছিল।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, কয়েক ঘণ্টার টানটান উত্তেজনার পর অভিযানে ১১ জন নিহত হয়েছেন এবং বাকিদের মুক্ত করা হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ঘটনাটিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি বলে বর্ণনা করেছেন।
হাইজ্যাকের শুরু: কীভাবে ঘটনার সূত্রপাত?
বুধবার সকাল ৮টা নাগাদ জাফর এক্সপ্রেস ট্রেন বেলুচিস্তানের একটি রিমোট এলাকায় পৌঁছালে কয়েকজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ট্রেনে উঠে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা প্রথমেই ট্রেনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে এবং যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলে।
![]() |
পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ট্রেন হাইজ্যাকের এবং সেনা অভিযানের দৃশ্য। প্রতীকী ছবি ।। |
স্থানীয় প্রশাসনের মতে, সন্ত্রাসীরা ট্রেনটি অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল, তবে চালক ও রেলকর্মীদের চাপে তারা সেটি পারেনি। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনার খবর সেনাবাহিনী ও পুলিশের কাছে পৌঁছে যায়।
সন্ত্রাসীদের দাবি কী ছিল?
জঙ্গিগোষ্ঠী এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দায় স্বীকার করেনি, তবে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, এটি বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর (BLA) একটি পরিকল্পিত অভিযান ছিল। তারা পাকিস্তান সরকারের কাছে কয়েকটি দাবি জানিয়েছিল, যার মধ্যে প্রধান ছিল—
- বন্দি সন্ত্রাসীদের মুক্তি
- বেলুচিস্তানের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা
- পাকিস্তানি সেনা প্রত্যাহার
তবে পাকিস্তান সরকার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে এবং সেনাবাহিনীকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলে।
সেনাবাহিনীর পাল্টা অভিযান: রক্তাক্ত সমাপ্তি
দুপুরের দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও বিশেষ বাহিনী (SOTF) হাইজ্যাক হওয়া ট্রেনটিকে ঘিরে ফেলে। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীদের আত্মসমর্পণের জন্য বারবার আহ্বান জানানো হলেও তারা রাজি হয়নি। বরং তারা গুলি চালাতে শুরু করে, ফলে সেনারা পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হয়।
অভিযানে ১১ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে এবং বাকিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ট্রেনে থাকা যাত্রীদের নিরাপদে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে, তবে ৪ জন যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন।
যাত্রীদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
একজন উদ্ধার হওয়া যাত্রী বলেন,
"আমি কখনো ভাবিনি যে জীবনের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হব। তারা আমাদের বলেছিল, আমরা যদি চুপচাপ থাকি, তবে আমাদের কিছু হবে না। কিন্তু আমরা জানতাম না আমাদের ভাগ্যে কী আছে।"
অন্য এক যাত্রী বলেন,
"আমরা প্রার্থনা করছিলাম, কারণ চারদিক থেকে গুলির শব্দ আসছিল। আমরা জানতাম না সেনাবাহিনী আমাদের বাঁচাতে পারবে কিনা।" "আলজাজিরা সংবাদ সূত্রে"
পাকিস্তানে ট্রেন হাইজ্যাক: জাকফ এক্সপ্রেসে যা ঘটেছিল
পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে যাত্রীবাহী ট্রেন জাকফ এক্সপ্রেস হাইজ্যাকের ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। ট্রেনটিতে প্রায় ৪০০ জন যাত্রী ছিলেন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও ছিলেন।
ঘটনাটি ঘটে ভোরবেলা, যখন বন্দুকধারীরা ট্রেনে চড়ার পর কয়েক ঘণ্টা যাত্রীদের জিম্মি করে রাখে। ট্রেনটি নাসিরাবাদ থেকে রওনা দেওয়ার পর বেলুচিস্তানের দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছালে হামলাকারীরা নিয়ন্ত্রণ নেয়।
ভোর ৫:০০ টা (স্থানীয় সময়) নাগাদ ট্রেনের কয়েকটি কামরা জোরপূর্বক দখল করে বন্দুকধারীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ট্রেন থামানোর পরপরই একাধিক সশস্ত্র ব্যক্তি ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং যাত্রীদের ভয় দেখিয়ে নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে আলাদা করে।
সেনাবাহিনী দ্রুত অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে, কিন্তু এর আগেই হামলাকারীরা ৩৫ জন যাত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যায়।
কে এই হামলার পেছনে?
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এই হামলার সঙ্গে বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন 'বেলুচ লিবারেশন আর্মি' (BLA) যুক্ত থাকতে পারে। তবে, এখনো পর্যন্ত কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে দায় স্বীকার করেনি।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনার পর সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
আরও খবর পড়ুনঃ পাকিস্তানে ট্রেনে ভয়াবহ বোমা হামলা বেলুচিস্তানে নিহত ৩৭
সরকারের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, "নিরীহ যাত্রীদের ওপর হামলা কাপুরুষোচিত কাজ। দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে।"
এদিকে, এই ঘটনার পর পুরো অঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনীর অভিযান চলছে। সুত্রঃ আলজাজিরা সংবাদ সুত্রে খবর ৷
সন্ত্রাসবাদ দমনে পাকিস্তানের চ্যালেঞ্জ
এই ঘটনার পর পাকিস্তানজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তানের জন্য এটি একটি বড় বার্তা— দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনো হুমকির মুখে রয়েছে।
বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা নতুন কিছু নয়। এর আগে ২০২৩ সালে একই রকম একটি হামলায় ২০ জন সেনা নিহত হয়েছিল। পাকিস্তান সরকার এর জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW-কে দায়ী করে, যদিও ভারত একে ভিত্তিহীন অভিযোগ বলে উড়িয়ে দেয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
- যুক্তরাষ্ট্র: হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানায়, তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পাশে থাকবে এবং প্রয়োজন হলে সহায়তা করবে।
- চীন: পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের মিত্র চীন এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
- ভারত: ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই ঘটনা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, তবে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
পাকিস্তানি সরকার এই ঘটনার পর বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে—
- বেলুচিস্তানে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানো
- সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন বন্ধ করতে কড়া ব্যবস্থা
- বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে বড় অভিযান শুরু
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী খুব শিগগিরই বেলুচিস্তানে নতুন সামরিক অভিযান চালাবে, যা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বড় আঘাত হানতে পারে।
উপসংহার
এই ঘটনা শুধু পাকিস্তানের জন্য নয়, বরং পুরো অঞ্চলের জন্যই একটি বড় সতর্কবার্তা। ট্রেন হাইজ্যাকের মতো ঘটনা দেখিয়ে দেয়, সন্ত্রাসবাদ এখনও একটি প্রধান হুমকি এবং এটি মোকাবিলায় দেশগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে বন্ধ করা সম্ভব হবে তো? সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান কতটা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বিশেষ সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদনঃ আরও বিস্তারিত খবর টি জানতে এই খবরটা বিস্তারিত দেওয়া আছে পড়তে পারেন।
পরবর্তী আপডেট খবর পেতে আমাদের সাথে থাকুন।
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ