পাকিস্তানে খতম, হাফিজ সাঈদের ডানহাত আবু কাতালের মৃত্যু ৷
পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের হামলায় লস্কর-ই-তৈয়বার শীর্ষ কমান্ডার ও ২৬/১১ মুম্বাই হামলার মাস্টারমাইন্ড হাফিজ সাঈদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবু কাতাল নিহত হয়েছে। আবু কাতাল, যার আসল নাম ছিল জিয়া-উর-রহমান, দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিরাপত্তার মধ্যে ছিল এবং লস্কর-ই-তৈয়বার গুরুত্বপূর্ণ লঞ্চপ্যাডের কমান্ডার হিসেবে কাজ করছিল।
সূত্র অনুযায়ী, শনিবার সন্ধ্যায় জলম এলাকায় আবু কাতাল তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে যাচ্ছিল। সে সময় অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা তার ওপর আকস্মিক হামলা চালায় এবং প্রায় ১৫-২০ রাউন্ড গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই আবু কাতাল ও তার এক দেহরক্ষী নিহত হন, অন্য এক নিরাপত্তা রক্ষী গুরুতর আহত হয়। হামলাকারীদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি, তবে স্থানীয় প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে।
কে ছিলেন আবু কাতাল?
আবু কাতাল লস্কর-ই-তৈয়বার অন্যতম শীর্ষ নেতা এবং কাশ্মীর ও ভারতের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে পরিচিত ছিল। তিনি শুধুমাত্র ২৬/১১ মুম্বাই হামলার মাস্টারমাইন্ড হাফিজ সাঈদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ই নন, বরং গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি বড় সন্ত্রাসী হামলার পেছনে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
![]() |
পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার প্রধান হাফিজ সাঈদ। সংগৃহীত ছবি |
২০২৩ সালে রাজৌরিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন আবু কাতাল। সেই হামলায় সাতজন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিল। এছাড়া, ২০২৪ সালের জুন মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসি জেলায় শিব খোরি মন্দির থেকে ফিরছিল এমন একটি বাসে হামলার সঙ্গেও তার নাম জড়িত। সেই হামলায় ১০ জন নিহত হয় এবং বহু যাত্রী আহত হয়।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার নজরে ছিল
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, আবু কাতাল দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের টার্গেটে ছিল। সম্প্রতি, জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগে চার্জশিট দাখিল করেছিল। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা চলছিল।
লস্কর-ই-তৈয়বার জন্য বড় ধাক্কা
আবু কাতালের মৃত্যু লস্কর-ই-তৈয়বা এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্য বড় ধাক্কা। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের মাটিতে এই ধরনের সন্ত্রাসবাদীদের মৃত্যু সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মধ্যে ভয় তৈরি করবে। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান সরকার এবং সেনাবাহিনী লস্কর-ই-তৈয়বার মতো সংগঠনকে মদত দিয়ে আসছে, কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে দেখা যাচ্ছে যে, তাদের নিজেদের মধ্যেই বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুনঃ পাকিস্তানে ট্রেনে ভয়াবহ বোমা হামলা বেলুচিস্তানে নিহত ৩৭
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
এই হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তান সরকার আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ISI ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বী সন্ত্রাসী সংগঠন বা অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। আবু কাতালের মতো কুখ্যাত সন্ত্রাসীর মৃত্যু সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই হত্যাকাণ্ডকে সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে বড় সফলতা হিসেবে দেখছে।
বিস্তারিত পড়ুন: "বিশদ তথ্যের জন্য পড়ুন: হিন্দুস্তান")
শেষ কথা
আবু কাতালের হত্যাকাণ্ড দক্ষিণ এশিয়ার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের গতিবিধি এবং পাকিস্তানের ভূমিকাকে নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে। এই ঘটনা কি পরিকল্পিত প্রতিশোধ, নাকি কোনো অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের ফল, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটি স্পষ্ট যে, লস্কর-ই-তৈয়বা এবং তাদের মদতদাতা পাকিস্তান এখন কঠিন সময়ের সম্মুখীন।
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ