এস-৪০০’কে ধ্বংস করা নাকি বাঁহাতের খেল! ‘ফতেহ-২’ এনে ভারতকে চিন্তায় ফেলেছে পাকিস্তান
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরক্ষা প্রতিযোগিতা দীর্ঘদিনের। দুই দেশের মধ্যে সামরিক শক্তি বাড়ানোর প্রতিযোগিতা নতুন কিছু নয়। এবার সেই প্রতিযোগিতার নতুন সংযোজন পাকিস্তানের ‘ফতেহ-২’ মিসাইল, যা ভারতের এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এই নতুন ট্যাকটিক্যাল ব্যালিস্টিক মিসাইলকে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে দেখছে, যা ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
‘ফতেহ-২’ মিসাইল: পাকিস্তানের নতুন শক্তি
পাকিস্তান সম্প্রতি সফলভাবে ‘ফতেহ-২’ নামের একটি নতুন ব্যালিস্টিক মিসাইলের পরীক্ষা চালিয়েছে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর দাবি, এটি তাদের অস্ত্রভাণ্ডারে একটি বিপ্লব আনবে। মিসাইলটি স্বল্প পরিসরের হলেও এটি নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ফতেহ-২’ মিসাইল মূলত ভারতের রাশিয়া থেকে কেনা অত্যাধুনিক এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে অকার্যকর করার উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এই মিসাইলের পরিসর প্রায় ৪০০ কিলোমিটার এবং এটি অত্যন্ত উচ্চগতিতে গতি পরিবর্তন করতে সক্ষম। এর ফলে শত্রুপক্ষের রাডার বা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের পক্ষে এটি চিহ্নিত করা কঠিন হবে।
এস-৪০০: ভারতের প্রতিরক্ষা বর্ম
ভারত ২০১৮ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ৫.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি করে অত্যাধুনিক এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ (S-400 Triumf) এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কেনে। এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শত্রুর যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও অন্যান্য আকাশ থেকে আসা হুমকিকে ৪০০ কিলোমিটার দূর থেকেই ধ্বংস করতে পারে। ভারত ইতিমধ্যে চীন ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এস-৪০০ মোতায়েন করেছে।
এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মূল শক্তি হলো— এটি একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে পারে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম। ফলে পাকিস্তানের যেকোনো ব্যালিস্টিক মিসাইল বা আকাশ থেকে আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর।
তবে পাকিস্তান দাবি করছে, ‘ফতেহ-২’ এস-৪০০ এর দুর্বলতাগুলো কাজে লাগিয়ে এটিকে অকার্যকর করতে পারবে।
![]() |
পাকিস্তানের ফতেহ-২ ব্যালিস্টিক মিসাইল বনাম ভারতের এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম – সামরিক প্রতিযোগিতার ৷ প্রতীকী চিত্র ৷৷ |
কীভাবে এস-৪০০’কে ধ্বংস করতে পারে ‘ফতেহ-২’?
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘ফতেহ-২’ মিসাইলের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা এস-৪০০ এর জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে—
- সুপারসনিক গতি – ‘ফতেহ-২’ অত্যন্ত দ্রুতগামী এবং এটি লো-অল্টিচিউডে (কম উচ্চতায়) উড়তে পারে। ফলে এস-৪০০ সহজে একে শনাক্ত করতে পারবে না।
- গতি পরিবর্তনের ক্ষমতা – মিসাইলটি মাঝপথে গতি ও দিক পরিবর্তন করতে পারে, যা এস-৪০০ এর ট্র্যাকিং সিস্টেমকে বিভ্রান্ত করতে পারে।
- স্টেলথ প্রযুক্তি – ‘ফতেহ-২’-তে এমন কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা এটিকে রাডারে ধরা পড়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
- স্মার্ট গাইডেন্স সিস্টেম – মিসাইলটিতে অত্যাধুনিক গাইডেন্স সিস্টেম রয়েছে, যা এটিকে নির্ভুলভাবে টার্গেট হিট করতে সাহায্য করবে।
এছাড়া, পাকিস্তান বিশ্বাস করে যে ‘ফতেহ-২’ দিয়ে ‘স্যাচুরেশন অ্যাটাক’ চালানো হলে এস-৪০০ কে পরাস্ত করা সম্ভব। অর্থাৎ, একসঙ্গে একাধিক মিসাইল ছোড়া হলে এস-৪০০ প্রতিটি মিসাইলের মোকাবিলা করতে পারবে না।
ভারতের পাল্টা কৌশল
ভারত ইতিমধ্যে ‘ফতেহ-২’ নিয়ে সতর্ক রয়েছে এবং সম্ভাব্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ‘প্রলয়’ ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং ‘আকাশ’ সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল দিয়ে পাকিস্তানের ব্যালিস্টিক মিসাইলকে প্রতিহত করতে পারে।
এছাড়া, ভারতীয় বিমানবাহিনীর হাতে S-400-এর সঙ্গে ব্রহ্মোস মিসাইল রয়েছে, যা পাকিস্তানের যে কোনো সামরিক অবস্থানকে ধ্বংস করতে সক্ষম।
আরও খবর পড়ুনঃ পরবর্তী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৯: সময়, স্থান ও বিস্তারিত কোথায় জানুন ৷
ভারত মনে করছে, পাকিস্তান যদি এস-৪০০’কে দুর্বল করার জন্য ‘ফতেহ-২’ ব্যবহার করে, তবে ভারতও পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত থাকবে। ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এস-৪০০ এতটাই শক্তিশালী যে, শুধুমাত্র একটি মিসাইল দিয়ে এটিকে পরাস্ত করা সহজ হবে না।
ভারত-পাকিস্তানের অস্ত্র প্রতিযোগিতা নতুন মাত্রায়
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বহুদিন ধরেই চলে আসছে। পাকিস্তান এই নতুন মিসাইল দিয়ে ভারতের শক্তি কমানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু ভারতও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের ‘ফতেহ-২’ যদিও শক্তিশালী, তবে ভারত এটি প্রতিহত করার জন্য নতুন কৌশল নিতে পারে। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এস-৪০০ একটি বিশ্বমানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং এটি সহজে ধ্বংস করা সম্ভব নয়।
তবে এটাও সত্য যে, যত বেশি নতুন অস্ত্র তৈরি হবে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তত বাড়বে। দুই দেশ যদি এই প্রতিযোগিতা বন্ধ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় সামরিক সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।
সুত্রঃ বিশেষ সংবাদ মাধ্যম ৷৷ আনন্দ বাজার
উপসংহার
পাকিস্তানের নতুন ব্যালিস্টিক মিসাইল ‘ফতেহ-২’ অবশ্যই ভারতের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ। তবে এস-৪০০ এখনো বিশ্বের অন্যতম সেরা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। পাকিস্তানের এই মিসাইল ভারতকে কতটা সমস্যায় ফেলতে পারে, তা ভবিষ্যতেই বোঝা যাবে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে এবং এশিয়া অঞ্চলের নিরাপত্তার ওপর এর প্রভাব পড়বে।
সুত্রঃ বিশেষ সংবাদ মাধ্যম ৷৷ আনন্দ বাজারতথ্যসূত্র: পাকিস্তানি ও ভারতীয় সামরিক বিশ্লেষকদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে।
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ