টানা তৃতীয় দিনের মতো ইস্তাম্বুলে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ
ইস্তাম্বুল, তুরস্কের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, গত তিন দিন ধরে উত্তাল হয়ে উঠেছে ছাত্র ও জনতার ব্যাপক বিক্ষোভে। এই বিক্ষোভের মূল কারণ হলো ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তার, যিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের একজন শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত। ২০২৫ সালের ২২ মার্চ পর্যন্ত চলা এই বিক্ষোভে হাজার হাজার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ প্রায় তিন লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে, যা তুরস্কের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
বিক্ষোভের পটভূমি
গত বুধবার ভোরে (১৯ মার্চ, ২০২৫) তুরস্কের পুলিশ ইমামোগলুকে তার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগগুলোকে অনেকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছেন, কারণ ইমামোগলু ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোগানের বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) থেকে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাময় ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর থেকে ইস্তাম্বুলের রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু হয়, যা শনিবার (২২ মার্চ) তৃতীয় দিনে পৌঁছেছে।
ইমামোগলু ২০১৯ সালে ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হয়ে এরদোগানের দল আক পার্টির দীর্ঘদিনের আধিপত্য ভেঙে দিয়েছিলেন। তার জনপ্রিয়তা এবং স্বচ্ছ প্রশাসনের জন্য তিনি তরুণদের কাছে একজন প্রিয় নেতা হয়ে উঠেছেন। তার গ্রেপ্তারের ঘটনা অনেকের কাছে গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তৃতীয় দিনের বিক্ষোভ: পরিস্থিতি
শনিবার সকাল থেকে ইস্তাম্বুলের সিটি হলের বাইরে হাজারো মানুষ জড়ো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভে মূল ভূমিকা পালন করছে। তারা শুধু ইমামোগলুর মুক্তির দাবি করছে না, বরং ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের তার ডিগ্রি বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের হাতে "ইমামোগলুকে মুক্ত করো", "গণতন্ত্রের জয় হোক" এবং "এরদোগানের একনায়কতন্ত্র বন্ধ করো" লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বিক্ষোভকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি উত্থাপন করলেও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট এবং জলকামান ব্যবহার করে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে। তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়েরলিকায়া জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত পর্যন্ত ৯৭ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে স্থানীয় মিডিয়া দাবি করছে, আটকের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
প্রেসিডেন্ট এরদোগান এই বিক্ষোভকে "রাস্তার সন্ত্রাস" হিসেবে অভিহিত করে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “ইস্তাম্বুলে একটি দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে অস্থিরতা সৃষ্টির অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তুরস্ককে অশান্ত করার জন্য কিছু লোকের ষড়যন্ত্র আমরা সফল হতে দেব না।” তিনি বিরোধী দল সিএইচপিকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে ইস্তাম্বুলে প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে এবং সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। এই পদক্ষেপগুলো বিক্ষোভকারীদের আরও ক্ষুব্ধ করেছে।
জনতার কণ্ঠ:
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন শিক্ষার্থী, আয়শে কায়া, বলেন, “আমরা এখানে শুধু ইমামোগলুর জন্য নই, আমাদের ভবিষ্যতের জন্য লড়ছি। এরদোগানের সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে। আমরা আর চুপ থাকব না।” আরেক বিক্ষোভকারী, মেহমেত আলতান, বলেন, “পুলিশ আমাদের উপর হামলা করছে, কিন্তু আমরা ভয় পাই না। এটা আমাদের অধিকারের লড়াই।”
শুক্রবার রাতে সিএইচপির প্রধান ওজগুর ওজেল সিটি হলের সামনে জনতার উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বলেন, “তুরস্ক বিক্ষোভ নিষেধাজ্ঞা আর পুলিশি দমন সহ্য করবে না। আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব।”
অর্থনৈতিক প্রভাব
ইমামোগলুর গ্রেপ্তার এবং বিক্ষোভের ফলে তুরস্কের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তুর্কি মুদ্রা লিরার মান ব্যাপকভাবে কমে গেছে, এবং শুক্রবার তুর্কি স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক প্রায় ৮ শতাংশ পড়ে গেছে। বিনিয়োগকারীরা এই রাজনৈতিক অস্থিরতাকে উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন।
ভবিষ্যৎ কী?
ইমামোগলুকে শনিবার আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে। তার সমর্থকরা আশা করছেন যে তিনি মুক্তি পাবেন, তবে সরকারের কঠোর মনোভাব এই আশাকে ম্লান করে দিচ্ছে। বিক্ষোভ যদি আরও তীব্র হয়, তাহলে তুরস্কে বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বিক্ষোভ এরদোগানের দীর্ঘদিনের শাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তরুণ প্রজন্মের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ এবং গণতন্ত্রের দাবি তুরস্কের ভবিষ্যৎ রাজনীতির দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তৃতীয় দিনেও বিক্ষোভের তীব্রতা না কমায় এটা স্পষ্ট যে, ইস্তাম্বুলের রাস্তায় যে আগুন জ্বলছে, তা সহজে নিভবে না।
বিস্তারিত পড়ুনঃ- বিঃদ্রঃ এই প্রতিবেদনটি বর্তমান তারিখ (২২ মার্চ, ২০২৫) এবং উপলব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে। পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আরও আপডেট থাকতে পারে। এই খবর টি পড়তে পারেন।
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ