BRICS: বৈশ্বিক শক্তির নতুন সমীকরণ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
BRICS: বৈশ্বিক শক্তির নতুন সমীকরণ
ভূমিকা:
BRICS (ব্রিকস) হল পাঁচটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর একটি জোট, যেখানে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা অন্তর্ভুক্ত। এই জোট ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ভারসাম্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে BRICS তার প্রভাব আরও বিস্তৃত করেছে, যা বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নতুন সমীকরণ সৃষ্টি করছে।
BRICS জোটের সূচনা হয়েছিল ২০০৬ সালে, যখন ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত এবং চীন একটি অঘোষিত গোষ্ঠী হিসেবে প্রথমবারের মতো একত্রিত হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০৯ সালে রাশিয়ার ইয়েকাটেরিনবুর্গে অনুষ্ঠিত প্রথম সম্মেলনের মাধ্যমে BRIC গঠিত হয়। পরে ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা এই জোটে যুক্ত হলে এটি "BRICS" নামে পরিচিত হয়।
![]() |
BRICS শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্বদেশ গুলো - প্রতিকী ছবি ।। |
BRICS-এর প্রধান উদ্দেশ্য
BRICS গঠনের মূল লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- বহুপাক্ষিক সহযোগিতা: সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং বিনিয়োগ সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
- আর্থিক প্রতিষ্ঠান গঠন: ডলার-নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প মুদ্রায় লেনদেন বৃদ্ধি করা।
- বৈশ্বিক নীতিনির্ধারণে ভূমিকা: বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ-এর আধিপত্যের বিপরীতে বিকল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।
- উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা: বিজ্ঞান, গবেষণা এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
BRICS-এর গুরুত্বপূর্ণ অর্জন
১. নতুন উন্নয়ন ব্যাংক (NDB) প্রতিষ্ঠা
২০১৪ সালে BRICS দেশগুলো তাদের নিজস্ব উন্নয়ন ব্যাংক, New Development Bank (NDB) প্রতিষ্ঠা করে, যা উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের বিকল্প হিসেবে কাজ করছে।
২. বিকল্প বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা
BRICS দেশগুলো মার্কিন ডলারের বিকল্প হিসেবে নিজেদের মুদ্রায় বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির গতিপথ পরিবর্তনে সহায়ক হতে পারে।
৩. বৈশ্বিক রাজনীতিতে শক্তিশালী উপস্থিতি
BRICS তার সদস্য দেশগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন জাতিসংঘ, WTO (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা) এবং G20-তে শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে।
BRICS-এর বর্তমান কার্যক্রম ও সম্প্রসারণ
১. নতুন সদস্য যুক্ত করার পরিকল্পনা
২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত BRICS শীর্ষ সম্মেলনে নতুন সদস্য দেশ অন্তর্ভুক্তির আলোচনা হয়েছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, মিশর এবং আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলোর অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে জোট আরও শক্তিশালী হতে পারে।
২. বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধি
BRICS দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিশ্ব বাজারে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করা হচ্ছে। চীন ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৩. ডিজিটাল মুদ্রার সম্ভাবনা
BRICS দেশগুলো নিজেদের মধ্যে ডিজিটাল মুদ্রা চালুর চিন্তা করছে, যা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক লেনদেনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।
BRICS-এর চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ
১. সদস্য দেশগুলোর ভিন্ন ভিন্ন অর্থনৈতিক কাঠামো
BRICS দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কাঠামোর পার্থক্য থাকায় সমন্বয় করা অনেক সময় চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে।
২. ভৌগোলিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব
ভারত ও চীনের সীমান্ত বিরোধ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো ইস্যুগুলো BRICS-এর ঐক্যের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
৩. আন্তর্জাতিক চাপ ও প্রতিযোগিতা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্লকগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা BRICS-এর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
উপসংহার
BRICS ধীরে ধীরে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি শক্তিশালী বিকল্প শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, তবে এর সম্প্রসারণ এবং বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উদ্যোগ ভবিষ্যতে বৈশ্বিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। BRICS-এর কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
2 মন্তব্যসমূহ
সঠিক সিদ্ধান্ত। ডলার পরিত্রান চাই।
উত্তরমুছুনGood News
উত্তরমুছুন