বেলুচিস্তানের নুশকি-দালবান্দিন হাইওয়েতে বাসের কাছে বিস্ফোরণ পাঁচজন নিহত, আহত ১০
বেলুচিস্তান, পাকিস্তান: বেলুচিস্তানের নুশকি-দালবান্দিন হাইওয়েতে একটি যাত্রীবাহী বাসের পাশে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন এবং আরও দশজন গুরুতর আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণটি কীভাবে ঘটেছে বা এর পেছনে কারা দায়ী তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি, তবে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
বিস্ফোরণের বিবরণ
বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে রবিবার সকালে, যখন যাত্রীবাহী বাসটি নুশকি-দালবান্দিন হাইওয়ে ধরে যাচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বাসটি হঠাৎই প্রবল বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় বাসের জানালা ও পাশের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আশপাশের এলাকাও কম্পিত হয়।
![]() |
১৬ মার্চ, ২০২৫ তারিখে নুশকি-দালবান্দিন মহাসড়কে বিস্ফোরণের পর ক্ষতিগ্রস্ত বাসের ধ্বংসাবশেষ। — প্রতিবেদক |
প্রাথমিক রিপোর্ট অনুসারে, বিস্ফোরণটি সম্ভবত রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা একটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (IED) বা রিমোট-নিয়ন্ত্রিত বোমার মাধ্যমে ঘটানো হতে পারে। তবে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য
বিস্ফোরণের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, "আমরা হঠাৎই বিকট শব্দ শুনতে পাই এবং চারপাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। বাসটি ধাক্কা খেয়ে কাত হয়ে পড়ে এবং ভেতরে থাকা যাত্রীরা চিৎকার করতে থাকেন।"
আরও খবর পড়ুনঃ পাকিস্তানে খতম, হাফিজ সাঈদের ডানহাত আবু কাতালের মৃত্যু ৷
একজন আহত যাত্রী বলেন, "আমি জানালার পাশে বসে ছিলাম, হঠাৎ একটা প্রচণ্ড আওয়াজ হয় এবং আমার কানে কিছুই শোনার ক্ষমতা ছিল না। এরপর দেখি চারপাশে ধোঁয়া, রক্ত এবং মানুষের আর্তনাদ।"
নিহত ও আহতদের পরিচয়
পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল এখনো নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে, আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, "আমরা আহতদের চিকিৎসার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নিহতদের পরিবারকে সহায়তা প্রদান করা হবে।"
বিস্ফোরণের সম্ভাব্য কারণ
বেলুচিস্তানে এর আগেও এমন বিস্ফোরণ ঘটেছে, যা সাধারণত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বা জঙ্গি সংগঠনগুলোর কাজ বলে মনে করা হয়। যদিও এখনো পর্যন্ত কোনো সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি একটি পরিকল্পিত হামলা হতে পারে।
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশ দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম ও সহিংসতার কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত। সেখানে বিভিন্ন গোষ্ঠী স্বাধীনতার দাবি তুলে সশস্ত্র আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রদেশটিতে নিয়মিতভাবে হামলার ঘটনা ঘটে।
নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া
বিস্ফোরণের পরপরই নিরাপত্তা বাহিনী পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। বেলুচিস্তান পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, "আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি এবং দায়ীদের দ্রুত চিহ্নিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি।"
একজন উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, "আমরা এই হামলার পেছনে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করবো এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনবো।"
বেলুচিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি
বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে কম জনবহুল প্রদেশগুলোর একটি, যেখানে বহু বছর ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বেলুচিস্তানে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হামলা এবং জঙ্গি কার্যকলাপ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে চীনের অর্থায়নে নির্মিত চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (CPEC) সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো লক্ষ্য করে বিভিন্ন হামলা হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের হামলা বেলুচিস্তানের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির একটি অংশ এবং সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সরকারি প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, "এটি একটি কাপুরুষোচিত হামলা। যারা এই ধরনের সহিংস কার্যক্রম চালায়, তারা মানবতার শত্রু। আমরা দোষীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করবো।"
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "আমরা দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেব।"
উদ্ধার কার্যক্রম ও চিকিৎসা সহায়তা
বিস্ফোরণের পরপরই উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকরা জানান, কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, ফলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
বেলুচিস্তানের স্বাস্থ্য বিভাগ আহতদের জন্য জরুরি চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছে এবং আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য কোয়েটার বড় হাসপাতালে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক মহল থেকেও এই হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের এক মুখপাত্র বলেছেন, "আমরা পাকিস্তানের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং আশা করি দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
পাশের দেশ আফগানিস্তান ও ইরানও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে সন্দেহভাজনদের খুঁজে বের করতে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করেছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, "আমরা সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করছি এবং সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।"
এছাড়াও, নুশকি-দালবান্দিন হাইওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে এবং রাস্তাগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুনঃ বিশেষ তথ্য জানতে এই Geo Tv খবরটা পড়ুন।
উপসংহার
বেলুচিস্তানে এই ধরনের বিস্ফোরণ নতুন নয়, তবে প্রতিবারই সাধারণ মানুষ এর শিকার হন। নুশকি-দালবান্দিন হাইওয়েতে যাত্রীবাহী বাসের কাছে এই বিস্ফোরণ আরও একবার প্রমাণ করলো যে, এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করা দরকার।
সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর এখন চাপ রয়েছে, যাতে তারা দোষীদের দ্রুত খুঁজে বের করে এবং ভবিষ্যতে এমন হামলা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়। আহতদের সুস্থতা কামনা করে দেশবাসী এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ