ভারতের ২০২৫-২৬ বাজেট: মধ্যবিত্তের স্বস্তি, দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ
ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে সংসদে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন। নরেন্দ্র মোদি সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট হিসেবে এটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বাজেটে আয়কর কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য স্বস্তির বার্তা বহন করে।
আয়কর কাঠামোতে পরিবর্তন:
নতুন আয়কর ব্যবস্থায় ১২ লাখ রুপি পর্যন্ত আয় করমুক্ত রাখা হয়েছে। এর আগে এই সীমা ছিল ৭ লাখ রুপি। এছাড়া, বেতনভোগীদের জন্য অতিরিক্ত ৬০ হাজার রুপি ছাড় দেওয়া হয়েছে, ফলে তাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা দাঁড়িয়েছে ১২.৭৫ লাখ রুপি। এই পরিবর্তনগুলোর ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির হাতে অতিরিক্ত অর্থ থাকবে, যা অভ্যন্তরীণ ব্যয়, সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
২০২৫-২৬ বাজেট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা:
বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। বিশ্লেষকরা এই প্রবৃদ্ধির হারকে সন্তোষজনক মনে করছেন না এবং দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আরও সংস্কারমূলক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছেন।
![]() |
ভারতের-২০২৫-২৬-বাজেট (প্রতিকী - ছবি ) |
বিনিয়োগ ও অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ:
বাজেটে পুঁজিগত ব্যয় এবং অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ কমানো হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই খাতে বিনিয়োগ কমানো হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মজুরি বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
আরও খবর পড়ুনঃ গার্ল মোনালিসা নতুন নায়িকা হতে চলেছেন বিনোদন জগতে!
বিদেশি সহায়তা ও প্রতিবেশী দেশসমূহ:
ভারত তার 'প্রতিবেশীই সবার আগে' নীতির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বাজেটে বৈদেশিক সহায়তার জন্য মোট ৫,৪৮৩ কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২০ কোটি রুপি, যা আগের বছরের সমান। ভুটানের জন্য সর্বোচ্চ ২,১৫০ কোটি রুপি এবং মালদ্বীপের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ৬০০ কোটি রুপি করা হয়েছে।
২০২৫-২৬ বাজেট প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ:
বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ:
বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিশেষ কোনো পদক্ষেপের উল্লেখ নেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, যা অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সামগ্রিক মূল্যায়ন:
বাজেটটি মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য আয়কর ছাড়ের মাধ্যমে স্বস্তি প্রদান করলেও দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সংস্কার ও অবকাঠামো উন্নয়নে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেয়নি বলে সমালোচনা রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অর্থনীতির স্থায়ী ও টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য আরও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সর্বোপরি, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটটি মধ্যবিত্তের করের বোঝা কমানোর মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদী স্বস্তি প্রদান করেছে, তবে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক পদক্ষেপের অভাব রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
1 মন্তব্যসমূহ
good news
উত্তরমুছুন