তুরস্ক থেকেও ‘কান’ কিনতে ‘চলেছে’ পাকিস্তান
তুরস্ক থেকেও ‘কান’ কিনতে ‘চলেছে’ পাকিস্তান: সামরিক সহযোগিতার নতুন অধ্যায়
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং সামরিক শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাকিস্তান আবারও নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। এবার তুরস্ক থেকে অত্যাধুনিক 'কান' যুদ্ধজাহাজ কেনার পরিকল্পনা করছে দেশটি। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের সামরিক উন্নয়ন এবং তুরস্কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতা নজরে এসেছে। এই চুক্তি দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
‘কান’ যুদ্ধজাহাজ: কি এই প্রযুক্তি?
‘কান’ নামক এই যুদ্ধজাহাজ হলো তুরস্কের সর্বাধুনিক সামরিক নৌযান। এটি তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত, যা সমুদ্র প্রতিরক্ষা এবং আক্রমণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এর বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে:
1. স্টেলথ প্রযুক্তি: এই জাহাজ শত্রুপক্ষের রাডার এড়িয়ে চলতে সক্ষম।
2. উন্নত অস্ত্রব্যবস্থা: এর মধ্যে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র, টর্পেডো এবং অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট সিস্টেম।
3. আধুনিক সেন্সর এবং রাডার সিস্টেম: যা শত্রুপক্ষের অবস্থান সঠিকভাবে নির্ণয় করতে সাহায্য করে।
4. দীর্ঘ সময় সমুদ্রে থাকার ক্ষমতা: এটি দীর্ঘ সময় ধরে গভীর সমুদ্রে অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম।
পাকিস্তানের নৌবাহিনী বর্তমানে বেশ কিছু পুরনো মডেলের যুদ্ধজাহাজ ব্যবহার করছে। এই নতুন যুদ্ধজাহাজ অন্তর্ভুক্ত হলে তাদের নৌবাহিনী আরও শক্তিশালী হবে।
তুরস্ক-পাকিস্তান সামরিক সম্পর্ক
তুরস্ক এবং পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক নতুন কিছু নয়। এর আগে পাকিস্তান তুরস্ক থেকে এফ-১৬ বিমান, ড্রোন এবং ট্যাংকের জন্য বিভিন্ন চুক্তি করেছে।
বিস্তারিত পড়ুনঃ সামরিক সরঞ্জাম কেনার পাশাপাশি পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তুরস্ক থেকে প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়ে থাকে।
তুরস্ক বর্তমানে নিজস্ব সামরিক প্রযুক্তি উন্নয়নে অত্যন্ত দক্ষ এবং বিভিন্ন দেশে অস্ত্র রপ্তানি করছে। পাকিস্তান এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে।
কেন পাকিস্তান ‘কান’ কিনতে আগ্রহী?
পাকিস্তান এমন এক সময়ে এই যুদ্ধজাহাজ কিনতে চাইছে যখন দেশটি একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। একদিকে রয়েছে ভারতের সঙ্গে চলমান সীমান্ত উত্তেজনা এবং অপরদিকে রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট।
1. সীমান্ত নিরাপত্তা: ভারত মহাসাগর এবং আরব সাগরে শক্তি প্রদর্শনের জন্য পাকিস্তানকে আরও আধুনিক নৌবাহিনী প্রয়োজন।
2. আন্তর্জাতিক কূটনীতি: তুরস্কের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক মজবুত করা পাকিস্তানের জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে কৌশলগত লাভ আনতে পারে।
3. প্রতিরক্ষা খাতে আধুনিকীকরণ: পাকিস্তান পুরনো যুদ্ধজাহাজ প্রতিস্থাপনের জন্য নতুন প্রজন্মের নৌযান কিনতে চায়।
আর্থিক সংকট: চুক্তির পথে বাধা?
পাকিস্তান বর্তমানে গভীর আর্থিক সংকটে ভুগছে। আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল)-এর ঋণ নিয়ে দেশটি তার অর্থনীতি চালানোর চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতিতে সামরিক সরঞ্জাম কেনার খরচ কতটা সামাল দিতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে তুরস্ক যদি সহজ শর্তে ঋণ বা বিশেষ চুক্তি দেয়, তাহলে পাকিস্তানের পক্ষে এই কেনাকাটা সম্ভব হতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের এই পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
1. ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি: পাকিস্তানের নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপে ভারত অবশ্যই সতর্ক থাকবে।
2. পশ্চিমা দেশগুলো: তুরস্ক এবং পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতা পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত, ন্যাটো মিত্র হিসেবে তুরস্কের এমন পদক্ষেপ ইউরোপ এবং আমেরিকার জন্য কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
পাকিস্তানের সামরিক স্বপ্ন
পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে নিজের সামরিক শক্তিকে উন্নত করার চেষ্টা করছে। এই যুদ্ধজাহাজ তাদের জন্য কেবল একটি অস্ত্র নয়, বরং একটি প্রতীক—যা আঞ্চলিক শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যম হতে পারে। তবে, আর্থিক সংকট এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের কারণে এই চুক্তি বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব হবে, তা দেখার বিষয়।
আরও পড়ুন : পাকিস্তান চিনের কাছে পঞ্চম প্রজন্মে যুদ্ধবিমান কিনতে চলেছে।'ঘুরপথে' ভারতকে কি সতর্ক করছে বাংলাদেশ
উপসংহার
তুরস্ক থেকে ‘কান’ যুদ্ধজাহাজ কেনার প্রচেষ্টা পাকিস্তানের সামরিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যদিও এই উদ্যোগ দেশটির সামরিক শক্তিকে বৃদ্ধি করবে, তবু অর্থনৈতিক সংকট এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া পাকিস্তানের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তুরস্ক-পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন এই অধ্যায় দুই দেশের ভবিষ্যৎ সামরিক সহযোগিতার পথ আরও প্রশস্ত করবে বলে আশা করা যায়।
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ