মহা কুম্ভে পদদলিত নিহত ৩০ জন, আহত ৬০ জন: ভয়াবহ দুর্ঘটনা
প্রতিবেদন: ভারতের উত্তরপ্রদেশের আল্লাহাবাদ (বর্তমানে প্রয়াগরাজ) শহরে অনুষ্ঠিত মহা কুম্ভ মেলা, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান। প্রতিবছর লাখ লাখ তীর্থযাত্রী এই মেলা উপলক্ষে গঙ্গাস্নান করতে আসেন, যা তাদের ধর্মীয় জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। তবে এবারের কুম্ভ মেলা উপলক্ষে ঘটে গেল একটি বিভীষিকাময় দুর্ঘটনা, যখন পদদলিত হয়ে ৩০ জন নিহত এবং ৬০ জন আহত হয়েছেন।
নিহত ৩০ জন, আহত ৬০ জন: ভয়াবহ দুর্ঘটনা সূত্রপাত:
মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, পবিত্র মৌনী অমাবস্যা দিনটি ছিল আধ্যাত্মিকতার পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং ওই দিনেই কুম্ভ মেলার সবচেয়ে বড় স্নান অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এমন এক দিনে লাখ লাখ তীর্থযাত্রী এসে স্নান করতে আগ্রহী ছিলেন।
তীর্থযাত্রীদের ব্যাপক উপস্থিতি এবং জমায়েতের ফলে হঠাৎ করে বিশাল চাপ সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীতে পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটায়। প্রতিবেশী রাজ্য থেকে এবং ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এই স্নানে অংশগ্রহণ করতে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই গঙ্গার তীরে স্নান করতে আসা মানুষের এক বিশাল জনসমুদ্র তৈরি হয়। এক পর্যায়ে স্নানের জন্য পিপাসিত মানুষের অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে না পেরে কিছু জায়গায় স্রোত ও জনস্রোতের সাথে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়।
হঠাৎ করেই কয়েকটি এলাকা থেকে দুর্ঘটনার খবর আসে। হাজার হাজার মানুষ একে অপরের উপর পড়ে যান এবং এর ফলে ঘটে ভয়াবহ পদদলিত ঘটনা। নিহত ও আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু, যারা স্নান করতে আসা অন্যান্য তীর্থযাত্রীদের ভিড়ে চাপা পড়েছিলেন।
![]() |
মিডিয়া থেকে নেওয়া ছবি |
মহা কুম্ভে দুর্ঘটনার কারণ:
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে যে, দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে একাধিক বিষয়কে দায়ী করা হচ্ছে। প্রথমত, অতিরিক্ত জনসমাগম এবং স্নান স্পটগুলির মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব না থাকা অন্যতম প্রধান কারণ। এর সাথে যুক্ত হয়েছে অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং স্নান এলাকা সঠিকভাবে প্রস্তুত না হওয়া।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল স্নান স্পটের বিষম পরিবহন ব্যবস্থা, যেখানে একাধিক ছোট পথ দিয়ে তীর্থযাত্রীরা প্রবাহিত হচ্ছিলেন, কিন্তু অনেক জায়গায় ভিড়ের কারণে বিভিন্ন পথ অবরুদ্ধ হয়ে যায়। কিছু স্নান এলাকা যেখানে একসাথে হাজার হাজার তীর্থযাত্রী উপস্থিত ছিলেন, সেখানে নিরাপত্তার অভাবে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়, যার ফলে এই ঘটনা ঘটে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মেলার শুরুর দিন থেকেই জনসমাগম অতিরিক্ত ছিল এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতির অভাবই এর মূল কারণ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিরাপত্তা বাহিনী এবং সাহায্য কর্মীদের উপস্থিতি যথেষ্ট ছিল না, এবং ঘটনাস্থলে দ্রুত উদ্ধার কাজ শুরু হতে দেরি হয়েছিল।
দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের সংখ্যা:
এখন পর্যন্ত ৩০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও পুরুষ। আহতের সংখ্যা ৬০ জন ছাড়িয়ে গেছে, যাদের মধ্যে বেশ কিছু জনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের মধ্যে অনেকের শরীরের বিভিন্ন অংশে চোট লেগেছে এবং হাসপাতালে চিকিৎসা চলমান রয়েছে। আহতদের মধ্যে ২৫ জনের অবস্থা গুরুতর, তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশেষ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর কাজ শুরু করে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশের পাশাপাশি জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) এবং অন্যান্য উদ্ধারকারী দলগুলিও কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের প্রতিক্রিয়া:
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। আমি নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছি এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে।"
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, "আমরা দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে দেখব এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।"
এছাড়াও, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই নিহতদের পরিবারগুলিকে ২০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করার ঘোষণা করেছে এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে।
অপারেশন এবং উদ্ধারকাজ:
পুলিশ ও উদ্ধারকারী বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে থাকে। প্রায় ৫০০ জন উদ্ধারকারী কর্মকর্তা এবং পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পরে উদ্ধার কাজ শুরু হয়।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন:
এই দুর্ঘটনা শুধু মানবিক বিপর্যয়ই নয়, বরং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। মহা কুম্ভ মেলা একটি বিশ্বখ্যাত ধর্মীয় উৎসব হলেও, সেখানে উপস্থিত হওয়া লাখ লাখ তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি, এমন অভিযোগ উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ছিল অতিরিক্ত জনসমাগম এবং অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফলস্বরূপ। আগামী দিনে, এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে প্রশাসনিকভাবে আরও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন। স্নান করার জায়গাগুলির মধ্যে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ, ভিড় ব্যবস্থাপনা, এবং পথ সংকীর্ণকরণ এর মতো বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
দুর্ঘটনার পরবর্তী পদক্ষেপ:
দুর্ঘটনা তদন্তের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করবে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রস্তাবনা তৈরি করবে।
এছাড়া, স্থানীয় প্রশাসন মহা কুম্ভ মেলার শর্ত এবং নিরাপত্তা বিধি নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা তৈরি করতে যাচ্ছে। বিশেষ করে, স্নান স্থানগুলোতে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন নিয়ম প্রবর্তন করা হতে পারে।
বিস্তারিত পড়ুনঃ Maha Kumbh stampede LIVE updates:
উপসংহার:
মহা কুম্ভ মেলা, যেখানে লাখো মানুষ একত্রিত হয়ে পবিত্র গঙ্গাস্নান করেন, সেখানে এই ধরনের দুর্ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এটি কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং একটি বৃহৎ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও বটে। শোকের এই মুহূর্তে, আমরা নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করি এবং তাদের পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানাই। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে প্রশাসনিক প্রস্তুতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে এমন দুর্ঘটনা আর ঘটবে না।
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ