স্থায়ী-অস্থায়ী বিতর্ক: কম মাইনের বেতনে বর্ধমান পৌরসভার অস্থায়ী কর্মীদের ক্ষোভ
বর্ধমান: স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীদের মধ্যে বৈষম্য নিয়ে ফের বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে বর্ধমান পৌরসভায়। কম বেতনে কাজ করেও স্থায়ী নিয়োগ না পাওয়ায় তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে অস্থায়ী কর্মীদের মধ্যে। দীর্ঘদিন ধরে একই ধরনের কাজ করলেও স্থায়ী কর্মীদের তুলনায় কম মাইনে এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শিকার হতে হচ্ছে অস্থায়ী কর্মচারীদের। তাদের দাবি, বছরের পর বছর ধরে কাজ করেও স্থায়ী স্বীকৃতি না পাওয়া এক ধরনের অন্যায়।
অস্থায়ী কর্মীদের অভিযোগ
অস্থায়ী কর্মচারীদের বক্তব্য, তারা দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার নানা পরিষেবা চালিয়ে যাচ্ছেন, অথচ তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নেই। একজন অস্থায়ী কর্মী বলেন, "আমরা দিনের পর দিন পরিশ্রম করছি, কিন্তু স্থায়ী কর্মীদের তুলনায় আমাদের বেতন অর্ধেকেরও কম। উৎসবের সময়ও আমরা ঠিকমতো বোনাস পাই না। অথচ, কাজের ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব একই রকম।"
এক অস্থায়ী সাফাই কর্মী বলেন, "আমরা শহরের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখি, অথচ আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। যখন খুশি আমাদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হতে পারে। স্থায়ী করার প্রতিশ্রুতি বারবার দেওয়া হলেও বাস্তবে কিছু হয় না।"
![]() |
ছবি- মুক্ত বাংলার পেপার কাটিং |
কম মাইনে, বেশি কাজের চাপ
অস্থায়ী কর্মীরা অভিযোগ করছেন, তাদের কাজের সময়সূচি দীর্ঘ হলেও তারা ন্যায্য মজুরি পান না। অনেক সময় ওভারটাইম করেও অতিরিক্ত পারিশ্রমিক মেলে না। অন্যদিকে, স্থায়ী কর্মীরা অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা পান, যা অস্থায়ীরা পান না।
একজন পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের অস্থায়ী কর্মী জানান, "আমাদের মাসিক বেতন মাত্র ৮,০০০ থেকে ১২,০০০ টাকা। বর্তমান বাজারে এই টাকায় সংসার চালানো অসম্ভব। অথচ, আমাদের সমান অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও স্থায়ী কর্মীরা ৩০,০০০-৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পান। এই বৈষম্য আমরা মেনে নিতে পারছি না।"
পৌরসভার যুক্তি ও প্রশাসনের বক্তব্য
বর্ধমান পৌরসভার এক আধিকারিক জানান, "অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ী করার দাবি বহুদিনের। তবে এটি রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। পৌরসভা তাদের কাজের সুযোগ দিতে আগ্রহী, কিন্তু সরকার অনুমোদন না দিলে আমরা কিছু করতে পারি না।"
অন্যদিকে, পৌরসভা দাবি করেছে যে, সরকারি বাজেটের সীমাবদ্ধতার কারণে সব কর্মীকে স্থায়ী করা সম্ভব নয়। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
রাজনীতির চাপ ও আন্দোলনের প্রস্তুতি
অস্থায়ী কর্মীদের এই আন্দোলনে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও সমর্থন জানাচ্ছে। বর্ধমান পৌরসভার বিরোধী এক নেতা বলেন, "এই কর্মীদের দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী করা হয়নি। অথচ পৌর পরিষেবা তাদের ওপর নির্ভরশীল। এটি সম্পূর্ণ অন্যায় এবং আমরা তাদের দাবির পাশে আছি।"
মুক্ত বাংলার পেপার কাটিং 👉👉 PDF 👈👈
অস্থায়ী কর্মীরা জানিয়েছেন, তাদের দাবিদাওয়া না মানলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পৌরসভা প্রশাসন একাধিক আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে, তবে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
ভবিষ্যৎ কী?
বর্ধমান পৌরসভার অস্থায়ী কর্মীদের এই সমস্যাটি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের নয়। গোটা রাজ্যজুড়ে পৌরসভাগুলিতে অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ীকরণ নিয়ে বিতর্ক চলছে। শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, এই ধরনের সমস্যা সমাধানে স্থায়ী নীতি তৈরি করতে হবে, যাতে বছরের পর বছর কাজ করেও কর্মীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে না থাকেন।
আরও খবর পড়ুনঃ "বর্ধমান পৌরসভা নিয়োগ ২০২৫ - আবেদন করুন অনারারি হেলথ ওয়ার্কার পদের জন্য"
কর্মীদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব তাদের স্থায়ীকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক, নাহলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবেন। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন তাদের দাবির প্রতি কতটা গুরুত্ব দেয় এবং কত দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়।
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
4 মন্তব্যসমূহ
গুড নিউজ
উত্তরমুছুনআমরা বর্ধমান পৌরসভায় গত ২২ বছর ধরেকাজ করছি অস্থায়ী কর্মী হিসাবেএত কম মাইএত র সংসার চলে নাবারবার মাইনে বাড়াবার জন্য বলা হলেও কোন কাজ হয় না।যদি আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ব্যাপারটা দেখে খুব ভালো হয়।
উত্তরমুছুনআপনার মন্তব্যের সহমত পোষন করি ৷
মুছুনI agree with your comment
মুছুন