ইরান JF-17 ব্লক III সংগ্রহের পথে, পাকিস্তান-চীন সামরিক সহযোগিতার নতুন মাইলফলক
ইরান তার সামরিক বাহিনীকে আধুনিকীকরণের লক্ষ্য নিয়ে পাকিস্তান-চীন যৌথভাবে নির্মিত উন্নত মাল্টিরোল ফাইটার জেট JF-17 ব্লক III সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইরান ইতোমধ্যে এই যুদ্ধবিমান সংগ্রহের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্যকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে।
JF-17 ব্লক III: উন্নত প্রযুক্তির প্রতিচ্ছবি
JF-17 ফাইটার জেট প্রকল্পটি পাকিস্তানের অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স (PAC) এবং চীনের চেংদু অ্যারোস্পেস কর্পোরেশন (CAC)-এর মধ্যে যৌথ সহযোগিতার ফল। এটি একটি মাল্টিরোল ফাইটার যা আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। বিশেষ করে ব্লক III সংস্করণটি উন্নত প্রযুক্তি এবং অস্ত্র সজ্জার দিক থেকে অন্য সব সংস্করণ থেকে বেশ এগিয়ে।
JF-17 ব্লক III-তে রয়েছে অত্যাধুনিক অ্যাক্টিভ ইলেকট্রনিকালি স্ক্যানড অ্যারে (AESA) রাডার, হেলমেট-মাউন্টেড ডিসপ্লে, ইনফ্রারেড সার্চ অ্যান্ড ট্র্যাক (IRST) সিস্টেম এবং উন্নত বিমান-বিমান এবং বিমান-মাটির ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনা। এই ফাইটার জেটটি চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান হলেও এর পারফরম্যান্স পঞ্চম প্রজন্মের বিমানের কাছাকাছি বলে মনে করা হয়।
ইরানের সামরিক উন্নয়ন এবং এর প্রভাব
ইরানের সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে নিষেধাজ্ঞা ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে পিছিয়ে পড়েছিল। ইরান বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের সামরিক সরঞ্জাম দেশীয়ভাবে উৎপাদন করলেও, উন্নত প্রযুক্তির ফাইটার জেটের অভাব ছিল। JF-17 ব্লক III সংগ্রহের মাধ্যমে ইরান তার বিমান বাহিনীর আক্রমণ এবং প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অনেকটাই বৃদ্ধি করতে পারবে।
এই সংগ্রহের মাধ্যমে ইরান তার বর্তমান মিগ-২৯ এবং F-14 টমক্যাটের মতো পুরোনো বিমানের পরিবর্তে নতুন প্রযুক্তি সংযোজন করতে পারবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান এই চুক্তির মাধ্যমে তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতার সঙ্গে আরও কার্যকর প্রতিযোগিতা করতে পারবে।
পাকিস্তান-চীন সামরিক অংশীদারিত্বের সাফল্য
পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে JF-17 প্রকল্পটি একটি সফল সামরিক সহযোগিতার অন্যতম প্রধান উদাহরণ। এই যুদ্ধবিমানটি ইতোমধ্যে মিয়ানমার, নাইজেরিয়ার মতো বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে। ইরানের সম্ভাব্য ক্রয় চুক্তি পাকিস্তান ও চীনের সামরিক পণ্যের বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
JF-17 ব্লক III-এর সফল রপ্তানি পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য বড় ধরনের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ তৈরি করবে। একই সঙ্গে, এটি চীনের সামরিক প্রযুক্তি রপ্তানির কৌশলের অংশ হিসেবে আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্যে পরিবর্তন
ইরানের এই সংগ্রহ মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। ইরান ইতোমধ্যে হিজবুল্লাহ এবং হুথি বিদ্রোহীদের সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। ফলে JF-17 সংগ্রহের ফলে এই সংগঠনগুলোর সামরিক শক্তি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা।
ইসরায়েল এবং সৌদি আরব ইরানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিকে তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। তাই এই চুক্তির ফলে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক প্রতিযোগিতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
যদিও ইরান এই সংগ্রহের দিকে এগোচ্ছে, তবুও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে পাকিস্তান এবং চীনের সামরিক সহযোগিতা পর্যবেক্ষণ করছে এবং সম্ভাব্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
তবে পাকিস্তান ও চীন দৃঢ়ভাবে ইরানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সম্প্রসারণে আগ্রহী। ভবিষ্যতে এই চুক্তি সফল হলে, এটি পাকিস্তান, চীন এবং ইরানের মধ্যে সামরিক সম্পর্কের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।
উপসংহার :
ইরানের JF-17 ব্লক III সংগ্রহের উদ্যোগ মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারে। এটি পাকিস্তান-চীন সামরিক অংশীদারিত্বের সাফল্যের প্রতীক এবং ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ