কোন সমীকরণে মাত্র ১৩ দিনেই ১৩ বছরেও হয়নি আসাদ সাম্রাজ্যের পতন ঘটাল বিদ্রোহীরা
কড়া হাতে এই বিদ্রোহীদের দমন করতে সব রকম চেষ্টা করেছিলো প্রেসিডেন্ট আসাদ।কিন্তু পেরে উঠতে পারে নাই , ফের এক গৃহযুদ্ধ। ফের পতন সরকারের। গত ১৩ বছর ধরে বিদ্রোহের আগুনে জ্বলছিল সিরিয়া। কড়া হাতে সেই বিদ্রোহ দমন করার সব রকম চেষ্টা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। কিন্তু অবশেষে হার মানতে বাধ্য হয় তাঁর বাহিনী। গত ১৩ বছরে যা হয়নি সেটাই
এতো দিনে হল। মাত্র ১৩ দিনেই আসাদের থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিল বিদ্রোহীরা। যাদের মাথায় রয়েছে আল কায়দার শাখা সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। কোন সমীকরণে গুঁড়িয়ে গেল আসাদ সাম্রাজ্য?
কড়া হাতে এই বিদ্রোহীদের দমন করতে সব রকম চেষ্টা করেছিলো প্রেসিডেন্ট আসাদ।
বাশার আল আসাদের আগে প্রেসিডেন্ট ছিলেন সিরিয়ায় হাফেজ আল-আসাদ। সব মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটির ক্ষমতার রাশ ধরে রেখেছিল আসাদ পরিবার। ২০০০ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন আসাদ। কিন্তু সব গন্ডোগোল পাকতে শুরু করে ২০১১ সালে। আরব হাওয়ায় উত্তাল হয়ে ওঠে মরুপ্রদেশটি। আকাশ বাতাস কেঁপে ওঠে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাতা আনতে ৷ এবং নায়ক হঠাও, গণতন্ত্র ফেরাও স্লোগানে। লেগে যায় গৃহযুদ্ধ । আসাদকে গদিচ্যুত করতে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিদ্রোহীরা যৌথমঞ্চ সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস’ (এসডিএফ)। কুর্দ বাহিনী পিপলস প্রোটেকশন ইউনিটের (ওয়াইপিজি) নেতৃত্বে আরম্ভ হয় এক যুদ্ধ। লড়াইয়ে বিদ্রোহীদের সাহায্য করতে শুরু করে আমেরিকা। পাশাপাশি আসাদের হয়ে আসরে নামে ইরানের সহযোগী হেজবোল্লা এবং মস্কো রাশিয়া।
![]() |
প্রতিকী ছবি |
২০১১ থেকে শুরু হওয়া এই গৃহযুদ্ধে প্রাণ গেছে বহু মানুষের। ২০১৩ সালে বিদ্রোহীদের দমনে আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে গুটায় রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের অভিযোগ ওঠে। প্রাণ যায় ছোট ছোট শিশু-সহ হাজার হাজার মানুষের। এভাবেই জারি ছিল লড়াই। যা তীব্র আকার ধারণ করে চলতি নভেম্বরে। গত ২৭ তারিখ আসাদ বাহিনীর হয়ে লড়তে অস্বীকার করে হেজবোল্লা। সেদিনই সিরিয়ার অন্যতম প্রধান শহর আলেপ্পোর একটা বড় অংশ দখল করে নেয় বিদ্রোহীরা। পরের দিন সরকারি বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করে ইদলিব প্রদেশে ঢুকে পড়ে তারা।
আরও পড়ুন : শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের সর্বনাশের জন্য দায়ী করলেন ইউনূস।
এভাবেই একটার পর একটা দখল করে শহরের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে এইচটিএসের নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহীরা। ৩০ তারিখ গোটা আলেপ্পো শহর দখল করে নেওয়ার ঘোষণা করে তারা। হামলায় ক্ষতবিক্ষত হয় পৃথিবীর প্রাচীনতম শহর। এর পর এক ধার থেকে হোমস, দারা, হামা হয়ে ৭ ডিসেম্বর রাজধানী দামাস্কাসের দুয়ারে পৌঁছে বিদ্রোহী বাহিনী। কিন্তু সেখানে তীব্র লড়াই করে আসাদের সেনা। সহজে হার মানতে রাজি হয়নি তারা। কিন্তু ৮ ডিসেম্বর ২০২৫ রবিবার ভোরে হার স্বীকার করতে বাধ্য হয় আসাদ বাহিনী। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম দেখাতে শুরু করে দেয় সিরিয়ায় সরকার পড়ে গিয়েছে। দামাস্কাসের মসজিদে গিয়ে জয় ঘোষণা করেন তাহরির আল-শামের প্রধান আবু মহম্মদ আল জোলানি। ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালান গদিচ্যুত প্রেসিডেন্ট আসাদ।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজা সংঘাত বড় প্রভাবই ফেলে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে। গাজায় হামাসের কোমড় ভেঙে গিয়েছে ইজরায়েল। যাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিল লেবাননের হেজবোল্লা। ইরানের মদতপুষ্ট এই জঙ্গি সংগঠনের প্রধান হাসান নাসরাল্লাকে খতম করে ইজরায়েলি সেনা। ফলে দুর্বল হয়ে গিয়েছে হেজবোল্লা। প্রায় একদশক ধরে ইরানের নির্দেশে আসাদ সরকারের হয়ে লড়াই ছিল তারা। কিন্তু লেবাননের লড়াই ছেড়ে আসাদের পাশে দাঁড়ানো হেজবোল্লার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তাই তারা সিরিয়া থেকে সরে আসার ঘোষণা করতেই হামলা শুরু করে আল শাম। এদিকে টানা দুবছর ধরে ইউক্রেনের সঙ্গে লড়াই করাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে সাহায্য সেভাবে না পাওয়াতে দূর্বল হয়ে যায় সিরিয়া। ফলে সব দিক থেকে সাঁড়াশি চাপে পড়েন আসাদ। আর এই সুযোগকেই কাজে লাগায় বিদ্রোহীরা। মাত্র ১৩ দিনেই আসাদ সাম্রাজ্যের পতন ঘটায় তারা। কিন্তু গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াই এখন কার্যত কব্জা করে নিয়েছে জেহাদিরা। যা সিরিয়ার নাগরিকদের পাশাপাশি গোটা বিশ্বের কাছে নতুন করে ত্রাস হয়ে উঠতে পারে।
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ